বীজগণিতীয় রাশির (একপদী, দ্বিপদী, বহুপদী) যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, বর্গ এবং ঘন সংক্রান্ত আলোচনা পূর্ববর্তী শ্রেণিতে করা হয়েছে। দ্বিপদী রাশি বা বহুপদী রাশির ঘাত বা শক্তি তিন এর বেশি হলে সেই সমস্ত ক্ষেত্রে মান নির্ণয় যথেষ্ট শ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। এই অধ্যায়ে দ্বিপদী রাশির ঘাত বা শক্তি তিন এর বেশি হলে কি প্রক্রিয়ায় কাজটি সম্পন্ন করা যায়, তা উপস্থাপন করা হবে। সাধারণভাবে ঘাত বা শক্তি এর জন্য সূত্র প্রতিপাদন করা হবে, যার মাধ্যমে যেকোনো অঋণাত্মক পূর্ণসাংখ্যিক ঘাতের দ্বিপদী রাশির মান নির্ণয় করা সম্ভব হবে। তবে এই পর্যায়ে এর মান একটি নির্দিষ্ট সীমা (n < 8) অতিক্রম করবে না। বিষয়টি যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে ও ব্যবহার করতে পারে সে জন্য একটি ত্রিভুজ ব্যবহার করা হবে যেটি প্যাসকেলের ত্রিভুজ (Pascal's triangle) বলে পরিচিত। দ্বিপদী রাশির ঘাত ধনাত্মক বা ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা ।
দুইটি পদের সমন্বয়ে গঠিত বীজগণিতীয় রাশিকে দ্বিপদী রাশি (Binomials) বলা হয়। ইত্যাদি দ্বিপদী রাশি। আমরা প্রথমেই একটি দ্বিপদী রাশি চিহ্নিত করি। এখন কে যদি ক্রমাগত দ্বারা গুণ করতে থাকি তাহলে আমরা পাব ইত্যাদি। আমরা জানি,
অনুরূপভাবে দীর্ঘ গুণন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইত্যাদি গুণফল নির্ণয় সম্ভব। কিন্তু এর ঘাত বা শক্তি যত বাড়তে থাকবে গুণফল তত দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ হবে। তাই এমন একটি সহজ পদ্ধতি বের করতে হবে যাতে এর যেকোনো ঘাত (ধরি ) বা শক্তির জন্য এর বিস্তৃতি সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এর মান অর্থাৎ অঋণাত্মক মানের জন্য এই অংশে আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে। এখন প্রক্রিয়াটি আমরা ভালভাবে লক্ষ করি।
এর মান | প্যাসকেল ত্রিভুজ | পদসংখ্যা | |
= | 1 | 1 | |
= | 2 | ||
= | 3 | ||
= | 4 | ||
= | 5 | ||
= | 6 |
উপরের বিস্তৃতিসমূহকে ভিত্তি করে আমরা এর বিস্তৃতি সম্পর্কে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারি।
ক) এর বিস্তৃতিতে সংখ্যক পদ আছে। অর্থাৎ ঘাত বা শক্তির চেয়ে পদসংখ্যা একটি বেশি।
খ) এর ঘাত শূন্য থেকে শুরু হয়ে 1, 2, 3, পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ এর ঘাত ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে পর্যন্ত পৌঁছাবে।
উপরের প্রত্যেক দ্বিপদী বিস্তৃতিতে এর বিভিন্ন ঘাতের সহগকে দ্বিপদী সহগ (coefficient) বলা হয়। 1 কে এর সহগ বিবেচনা করতে হবে। উপরের বিস্তৃতির সহগগুলোকে সাজালে আমরা পাই
লক্ষ করলে দেখব সহগগুলো একটি ত্রিভুজের আকার ধারণ করেছে। দ্বিপদী বিস্তৃতির সহগ নির্ণয়ের এই কৌশল Blaise Pascal প্রথম ব্যবহার করেন। তাই এই ত্রিভুজকে প্যাসকেলের ত্রিভুজ (Pascal's triangle) বলা হয়। প্যাসকেলের ত্রিভুজের সাহায্যে আমরা সহজেই দ্বিপদী রাশির বিস্তৃতিতে সহগসমূহ নির্ণয় করতে পারি।
প্যাসকেলের ত্রিভুজ থেকে আমরা দেখতে পাই এর বাম ও ডান দিকে 1 আছে। ত্রিভুজের মাঝখানের সংখ্যাগুলোর প্রত্যেকটি ঠিক উপরের দুইটি সংখ্যার যোগফল। নিম্নের উদাহরণটি লক্ষ করলে বিষয়টি খুব সহজেই বুঝা যাবে।
ও
এর জন্য দ্বিপদী সহগগুলো হবে নিম্নরূপ:
এবং
আমরা যদি ভালভাবে খেয়াল করি তাহলে বুঝতে পারব এই পদ্ধতির একটি বিশেষ দুর্বলতা আছে। যেমন আমরা যদি এর বিস্তৃতি জানতে চাই তাহলে এর বিস্তৃতি জানা দরকার। আবার যেকোনো দ্বিপদী সহগ জানার জন্য তার ঠিক উপরের পূর্ববর্তী দুইটি সহগ জানা প্রয়োজন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা সরাসরি দ্বিপদী সহগ নির্ণয়ের কৌশল বের করতে চাই। প্যাসকেলের ত্রিভুজ থেকে আমরা দেখতে পাই দ্বিপদী বিস্তৃতির সহগগুলো ঘাত এবং পদটি কোন অবস্থানে আছে যেখানে তার উপর নির্ভরশীল। আমরা একটি নতুন সাংকেতিক চিহ্ন বিবেচনা করি যেখানে ঘাত এবং পদের অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ যদি হয় তবে পদসংখ্যা হবে 5 টি। আমরা পদগুলি নিম্নোক্ত উপায়ে লিখি ।
যখন , পদসংখ্যা 5 টি :
তাদের সহগগুলি হলো:
নতুন চিহ্ন ব্যবহার করে সহগ:
এখানে, এবং
[প্যাসকেলের ত্রিভুজ থেকে সহজেই বুঝতে পারবে]
উল্লিখিত নতুন চিহ্নের সাহায্যে প্যাসকেলের ত্রিভুজ হবে নিচের টেবিলের অনুরূপ:
সুতরাং উপরের ত্রিভুজ থেকে আমরা খুব সহজেই বলতে পারি এর বিস্তৃতির তৃতীয় () পদের সহগ এবং এর বিস্তৃতির তৃতীয় ও চতুর্থ পদের সহগ যথাক্রমে। সাধারণভাবে এর বিস্তৃতির তম পদ এর সহগ ।
এখন, এর মান কত তা জানার জন্য আবারো প্যাসকেলের ত্রিভুজ লক্ষ করি। প্যাসকেলের ত্রিভুজের দুইটি হেলানো পার্শ্ব থেকে আমরা দেখতে পাই,
আমরা ধরে পাই
এবং
সুতরাং এর মানের ক্ষেত্রে বলা যায়, এবং
সাধারণভাবে আমরা লিখতে পারি,
উপরোক্ত চিহ্ন ব্যবহার করে পাই,
এবংএর বিস্তৃতি
উদাহরণ ১. কে বিস্তৃত কর।
সমাধান: প্যাসকেলের ত্রিভুজের সাহায্যে -
দ্বিপদী উপপাদ্যের সাহায্যে -
উদাহরণ ২. ) কে পঞ্চম পদ পর্যন্ত বিস্তৃত কর।
সমাধান :
দ্বিপদী বিস্তৃতি ব্যবহার করে এর পঞ্চম পদ পর্যন্ত বিস্তৃতি নিম্নরূপ:
[পঞ্চম পদ পর্যন্ত বিস্তৃতি]
[প্যাসকেলের ত্রিভুজের সাহায্যে নিজে কর।]
আমরা এ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পর্যায়ে আমরা দ্বিপদী বিস্তৃতির সাধারণ আকার নিয়ে আলোচনা করব যেখানে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা। এর বিস্তৃতি সাধারণভাবে দ্বিপদী উপপাদ্য নামে পরিচিত।
আমরা জানি,
এখন,
এটিই হচ্ছে দ্বিপদী উপপাদ্যের সাধারণ আকার। লক্ষণীয় এই বিস্তৃতি এর অনুরূপ। এখানে এর ঘাত থেকে 0 পর্যন্ত যোগ করা হয়েছে। আরো লক্ষণীয়, প্রতি পদে ও এর ঘাতের যোগফল দ্বিপদীর ঘাতের সমান। প্রথম পদে এর ঘাত থেকে শুরু হয়ে সর্বশেষ পদে শূন্য। ঠিক বিপরীতভাবে এর ঘাত প্রথম পদে শূন্য থেকে শুরু হয়ে শেষ পদে হয়েছে।
উদাহরণ ৩. কে বিস্তৃত কর এবং উহা হইতে এর বিস্তৃতি নির্ণয় কর।
সমাধান:
নির্ণেয় বিস্তৃতি
এখন এবং বসাই
উদাহরণ ৪. কে এর ঘাতের অধঃক্রম অনুসারে চতুর্থ পদ পর্যন্ত বিস্তৃত কর এবং মুক্ত পদটি শনাক্ত কর।
সমাধান: দ্বিপদী উপপাদ্য অনুসারে পাই,
নির্ণেয় বিস্তৃতি এবং মুক্ত পদ
নিচের উদাহরণগুলো লক্ষ করি:
ডানদিকের গুণফলসমূহকে আমরা এখন সংক্ষেপে একটি সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি।
এখন লক্ষ করি:
সাধারণভাবে লিখতে পারি, এবং কে ফ্যাক্টোরিয়াল (Factorial) বলা হয়। তদ্রুপ কে ফ্যাক্টোরিয়াল তিন, কে ফ্যাক্টোরিয়াল চার ইত্যাদি পড়া হয়।
আবার লক্ষ করি:
সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি
ডান পাশের ফ্যাক্টোরিয়ালসমূহকে যে প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয় তা হলো,
এবং
সুতরাং, অর্থাৎ, ও এর মান এক।
আমরা জানি
অর্থাৎ
মনে রাখতে হবে
এখন দ্বিপদী উপপাদ্যতে আমরা কে দ্বারা প্রকাশ করব।
এবং অনুরূপভাবে,
লক্ষণীয়: ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা এর জন্য
দ্বিপদী বিস্তৃতি এর সাধারণ পদ বা তম পদ বা
এখানে, বা দ্বিপদী সহগ।
সাধারণ পদ বা তম পদ যেখানে বা দ্বিপদী সহগ ।
উদাহরণ ৫. কে বিস্তৃত কর।
সমাধান: দ্বিপদী উপপাদ্য ব্যবহার করে